বুড়িগঙ্গায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী মায়ের লাশের বুকে জড়িয়ে রাখা ছিল ২ বছরের ছেলেকে

বুড়িগঙ্গায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী মায়ের লাশের বুকে জড়িয়ে রাখা ছিল ২ বছরের ছেলেকে

সুরমার ঢেউ সংবাদ : ২ বছরের ছোট্ট ছেলে তালহা ও ভগ্নিপতি মো. আলম (৪০)-কে সাথে নিয়ে ঢাকার এপ্যোলো হাসপাতালে ডাক্তার দেখানের উদ্দেশ্যে ঢাকা আসছিলেন লৌহজংয়ের পাড়াগাও গ্রামের মারফি আক্তার (২৮)। কিন্তু ঢাকা পৌছানের আগেই বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় ছেলেকে বুকে নিয়েই তলিয়ে গেলেন মারফি।
যখন লাশ উদ্ধার হবার পর দেখা যায় মারফি আক্তারের বুকে জড়ানো রয়েছে তার সন্তান তালহা। এ ঘটনায় লাশ হয়েছেন ভগ্নিপতি মো. আলমও।
ভাগ্নে মো. মিলন জানান, তার মামা ও মামি লৌহজংয়ের পাড়াগাও এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তার মামা মো. বেলায়েতের (৩৮) গ্রামে মুদি দোকান আছে। এপলো হাসপাতালে অনেকদিন ধরেই তার মামির ডাক্তার দেখানোর কথা । কিন্তু নানা ব্যস্ততায় ডাক্তার দেখাতে আসতে পারছিলেন না। রবিবার রাত থেকে হঠাৎ মামির বুকের ব্যাথা বেড়ে যায়। মামা ব্যস্ততার কারণে আসতে না পারায় বড়ো বোনের জামাই মো. আলমের সঙ্গে ছোট ছেলে তালহাকে নিয়েই ঢাকার পথে রওনা দেন মামী।
তবে তাদের আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়নি। ২৯ জুন সোমবার সকালে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চে ঢাকার সদরঘাটে আসছিলেন তারা। সদরঘাটের কাছাকাছি ফরাশগঞ্জ এলাকায় আসতেই পেছন থেকে এমভি ময়ূরী-২ পিছন থেকে মর্নিং বার্ড লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সব যাত্রী নিয়েই মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। অল্প কিছু যাত্রী সাঁতরে উঠতে পারলেও বেশিরভাগ যাত্রী তলিয়ে যায়। টিভিতে লঞ্চ দুর্ঘটনার খবর দেখে মারফির পরিবারের স্বজনরা দ্রুতই ঘটনাস্থলে আসেন। বেলা ১২টার দিকে মারফির লাশ উদ্ধার করে ডুবরিরা। ছোট্ট শিশু তালহাকে হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে রেখে ছিলেন মারফি। ওই অবস্থাতেই তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। উপস্থিতরা জানান, হয়ত শিশুটিকে ছেড়ে দিয়ে নিজে বাঁচার চেষ্টা করলে বাঁচতেও পারতেন মা। এর কিছুক্ষণ পর আলমের লাশও উদ্ধার করে ডুবুরিরা। উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশ পাঠিয়ে দেয়া হয়। স্বজনরা সেখান থেকে লাশ বুঝে নিয়ে রওনা দেন লৌহজং পাড়াগাও গ্রামের উদ্দেশ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *