মিষ্টি আলু খাবেন কেন?

মিষ্টি আলু খাবেন কেন?

গোল আলুর সকল স্বাস্থ্য উপকারিতাই মিষ্টি আলুতে রয়েছে এবং এছাড়াও মিষ্টি আলু আরো কিছু উপকার করে। লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকোর স্পোর্টস ডায়েটিশিয়ান ইয়াসি আনসারি বলেন, ‘সাধারণত আপনার খাদ্য তালিকায় যত বেশি রঙিন ফল ও শাকসবজি যোগ করা যায় তত ভালো।’

মিষ্টি আলু বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে এবং তা পুষ্টিতে ভরপুর। এটি আপনার হার্ট ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে, দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষিত রাখে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রক্ষা করে।

এ প্রতিবেদনে মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণ ও কিভাবে মিষ্টি আলু খাবেন তা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

মিষ্টি আলুর পুষ্টি উপকারিতা কী?
সকল আলু পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর, বলেন নিউ ইয়র্কে অবস্থিত বিজেড নিউট্রিশনের স্বত্ত্বাধিকারী ও ডায়েটিশিয়ান ব্রিজিটি জিটলিন। কিন্তু মিষ্টি আলুতে (কমলা, হলুদ ও পার্পল রঙের মিষ্টি আলু) গোল আলুর তুলনায় কম ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। মিষ্টি আলুতে উচ্চ মাত্রায় ‘ভিটামিন এ’ থাকে। ‘ভিটামিন এ’ হচ্ছে একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে এবং সুস্থ ত্বক ও দৃষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করে। একটি মিষ্টি আলু আপনাকে দৈনিক সুপারিশকৃত ১০০ শতাংশের বেশি ভিটামিন এ সরবরাহ করে, ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার অনুসারে।

মিষ্টি আলুতে প্রচুর ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি৬ থাকে, যা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামেরও ভালো উৎস, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়া একটি মিষ্টি আলুতে প্রায় চার গ্রাম উদ্ভিজ্জ ফাইবার রয়েছে, যা আপনাকে স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমায়, যেমন- টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও উচ্চ কোলেস্টেরল।

মিষ্টি আলুতে উচ্চ কার্বোহাইড্রেট থাকে?
স্টার্চি রুট ভেজিটেবল হিসেবে মিষ্টি আলুতে নন-স্টার্চি ভেজিটেবলের (যেমন- ব্রকলি) চেয়ে বেশি কার্বোহাইড্রেট থাকে। অর্ধ বাটি মিষ্টি আলুতে প্রায় ১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যেখানে সমপরিমাণ ব্রকলিতে থাকে প্রায় ৩ গ্রাম। কিন্তু এটি হতে পারে মিষ্টি আলু খাওয়ার অন্যতম কারণ, ভয় পাওয়ার নয়। আনসারি বলেন, ‘নন-স্টার্চি সবজির তুলনায় মিষ্টি আলু বেশি শক্তির যোগান দেয়, যে কারণে এটি দৈনন্দিন কার্যক্রম ও অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্সের জন্য একটি ব্যতিক্রমী জ্বালানি উৎস।’ সারকথা হচ্ছে, সকল শাকসবজিই আপনার ডায়েটে যুক্ত করার মতো স্বাস্থ্যকর অপশন এবং তারা বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সরবরাহ করে থাকে, বলেন জিটলিন।

মিষ্টি আলু খাওয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায় কি?
কেনার সময় গাঢ় রঙের মিষ্টি আলু কিনুন। কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে, মিষ্টি আলুর রঙ (এটি কমলা, হলুদ অথবা পার্পল যে রঙেরই হোক না কেন) যত বেশি গাঢ় হবে, পুষ্টিগুণ তত বেশি হবে। খোসা ছাড়িয়ে মিষ্টি আলু খাবেন না। সব ধরনের আলু খাওয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় হচ্ছে খোসাসহ খাওয়া, কারণ এতে প্রচুর ফাইবার থাকে, বলেন জিটলিন। খোসায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও থাকে।

মিষ্টি আলু রান্নার সর্বোত্তম উপায়?
আপনি স্টিমিং, রোস্টিং, বেকিং অথবা বয়েলিং যেভাবেই মিষ্টি আলু খান না কেন, পুষ্টি পাবেন। তাই মিষ্টি আলু প্রস্তুতের সকল পদ্ধতিই পুষ্টিকর। আপনি সয়ামিল্ক, প্রোটিন পাউডার ও দারুচিনিসহ স্মুদিতে মিষ্টি আলু মেশাতে পারেন অথবা মিষ্টি আলু ব্লেন্ড করে স্যূপে যোগ করতে পারেন। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ ডেজার্ট হিসেবে মিষ্টি আলুর ভর্তা চমৎকার: এতে মধু যোগ করুন এবং আখরোট ছিটান। মিষ্টি আলুকে বেশিক্ষণ রান্না করবেন না, কারণ দীর্ঘক্ষণ রান্না করলে পুষ্টিগুণ কমে যায়। ফ্যাটের কথা ভুলে যাবেন না। ভিটামিন এ এর মতো ফ্যাট-সলিউবল ভিটামিন ফ্যাট সোর্সের সঙ্গে ভালোভাবে শোষিত হয়, তাই মিষ্টি আলুর সঙ্গে অল্প পরিমাণে ফ্যাট খান। মিষ্টি আলুর সঙ্গে ফ্যাট সমন্বয়ের একটি স্বাস্থ্যসম্মত অপশন হচ্ছে অলিভ অয়েল- বেকিংয়ের পূর্বে মিষ্টি আলুর ওপর অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল ছিটাতে পারেন। অন্য একটি উপায় হচ্ছে অ্যাভোক্যাডো, পিক্যান অথবা আখরোটের পাশাপাশি মিষ্টি আলু খাওয়া।

তথ্যসূত্র : টাইম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *